নিজস্ব প্রতিবেদক জকিগঞ্জ টুডে:: জকিগঞ্জে কথিত ‘গলাকাটা’ নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকার নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে গোটারগ্রামের হয়রানির শিকার দু’টি পরিবারের স্বজনসহ পুরো এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩নং কাজলসার ইউনিয়নের গোটারগ্রাম ত্রিমোহনীতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে গোটারগ্রামের এবাদুর রহমানকে কথিত ‘গলাকাটা’ নাটকের রূপকার ও একজন চিহ্নিত প্রতারক দাবি করে তাঁর ছেলে মিজানুর রহমান ফয়ছল কর্তৃক দায়েরকৃত পরিকল্পিত মিথ্যা ও সাজানো মামলা থেকে পরিত্রানের দাবী জানিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত রোববার (২১মার্চ) রাত পৌনে ৮ ঘটিকার দিকে দক্ষিণ গোটারগ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে এবাদুর রহমানের গলাকাটার ঘটনা ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ও সাজানো নাটক। তাৎক্ষণিক এলাকাবাসী সহ কেউ-ই বিষয়টি বুঝতে না পারলেও সময়ের ব্যাবধানে তা এখন সবার নিকট পরিস্কার হয়ে উঠেছে। পরিকল্পিতভাবে গলাকাটার নাটক সাজিয়ে এবাদুর রহমান এলাকার লোকজনকে হয়রানী করে যাচ্ছেন। কথিত গলাকাটার ঘটনার পর ওই রাতে নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যাক্তি গোটারগ্রামের মৃত ফয়জুর রহমানের ছেলে মোস্তাক আহমদ ও আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুল বাছিতকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এতে হতভম্ব হয়ে যান এবাদুর রহমানের পক্ষের প্রতিবাদকারীরাও।
পরে জানা যায়, তাদের নামোল্লেখ করে এবাদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। এলাকার নিরীহ দুজনকে গ্রেফতার করানোর পর এবাদুর রহমানের নাটকের মুখোশ উন্মোচন হয়। বেরিয়ে আসে ঘটনাটি একটি প্রভাবশালী চক্রের সাজানো ও পূর্ব পরিকল্পিত নাটক। যা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সর্বত্র। সামনে আসে এবাদুর রহমানের সৃষ্ট এমন অনেক প্রতারণামূলক কাহিনী।
লিখিত বক্তব্যে ভোক্তভোগী মোস্তাক আহমদের ভাই মাওলানা আফতাব উদ্দিন ও আব্দুল বাছিতের ভাই সোহেল আহমদ সাজানো, হয়রানীমূলক মিথ্যা এ মামলায় গ্রেফতারকৃত মোস্তাক আহমদ ও আব্দুল বাছিতকে সম্পূর্ণ নির্দোষ উল্লেখ করে অভিলম্বে তাদের মুক্তি ও হয়রানি বন্ধের দাবী জানিয়ে বলেন, গ্রেফতারকৃত মোস্তাক আহমদ ঘটনার সময় স্থানীয় রতনগঞ্জ বাজারে ছিলেন। রতনগঞ্জ বাজারে বহু লোকজন তাকে দেখেছেন। অপর আসামী আব্দুল বাছিত ঘটনার সময় গোটারগ্রাম ত্রিমোহনীতে অবস্থান করছিলেন। এলাকার শতশত লোক প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী। অথচ অতীতের বহু প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত এবাদুর রহমান একটি লোমহর্ষক ঘটনা সাজিয়ে হয়রানীমূলক মামলা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে দু’জন নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করিয়ে জেলে পাঠিয়েছেন। এমন অকল্পনীয় ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারসহ এলাকাবাসী হতবাক হয়েছেন।
তারা এবাদুর রহমানের এহেন মিথ্যা নাটকের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মূল রহস্য উদঘাটন করার আহবান জানিয়ে বলেন, এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া পুলিশ আর কাউকে যেন গ্রেফতার ও হয়রানি না করে। এবাদুর রহমান এলাকার নিরীহ আরও অনেকজনকে ফাঁসানোর পায়তারা করছেন। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জকিগঞ্জ থানা পুলিশের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ঘটনা যখন ঘটেছে তখন সন্ধ্যা রাত। গ্রামাঞ্চলে এই সময়ে রাস্তাঘাটে অহরহ মানুষ চলাচল করেন। এবাদুর রহমানকে যেখান থেকে কথিত ‘গলাকাটা’ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, সে জায়গাটি একটি জনবহুল এলাকা। চারিদিকে বাড়ি ঘর ও রাস্তাঘাট। ঘটনার একেবারেই পাঁশে ব্যাস্ততম আটগ্রাম-জকিগঞ্জ সড়ক। সেখানে এতো বড় ঘটনা ঘটলেও পাশের বাড়ি বা রাস্তায় চলাচলকারী একটি লোক ঘটনাটি দেখেনি কিংবা কোন ধরণের চিল্লাচিল্লি শুনেনি! ঘটনাস্থলে নেই ধস্তাাধস্তি ও রক্তের কোন চিহ্ন। শত্রæতামূলকভাবে তাকে কেউ মেরে ফেলতে চাইলে গলার রগ বা শ্বাসনালী কেটে ফেলতো। কিন্তু প্রকৃতভাবে এবাদুর রহমানের গলার পাশের উপরের চামড়া আর একটু মাংস কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবী, এবাদুর রহমানের উপর কোন আক্রমণ হয়নি। সে একটি প্রভাবশালী চক্রের মিশন বাস্তবায়নে বড় অংকের টাকা নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে এ কাহিনী সৃষ্টি করেছে। এরআগেও অনেকভাবে নিরীহ মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। কখনো আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়ে নাটক করে থাকে। গভীরে তদন্ত করলে এবাদুর রহমানের অসংখ্য হয়রানী ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া যাবে। সম্প্রতি ‘গলা কাটা’ নাটকের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও গ্রেফতারকৃতদের দ্রæত মুক্তি এবং এবাদুর রহমানের কথায় নতুন করে কাউকে হয়রানি না করতে এলাকাবাসী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানান। সংবাদ সম্মেলনে হয়রানির শিকার দু’টি পরিবারের লোকজন ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার শতাধিক লোকজন উপস্থিত থেকে প্রতিবাদ জানান।
এবাদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান ফয়সলের দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় অন্যতম স্বাক্ষী বদরুল হক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে বলেন, যাদেরকে এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে তারা কোনভাবেই এ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। পূর্ব শত্রæতার রেশ মেটাতে গলাকাটার ঘটনা সাজিয়ে তাদেরকে হয়রানী করা হচ্ছে। এবাদুর রহমানের নানা কর্মকাÐে সবার কাছে স্পষ্ট হয়েছে ‘গলাকাটার’ ঘটনা সাজানো। তিনি স্বাক্ষী হলেও জানতেন না এজাহারে গ্রেফতারকৃত মোস্তাক আহমদ ও আব্দুল বাসিতকে আসামী করা হয়েছে বলে। জানলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করতেন বলে দাবী করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জকিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি খায়ের, সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত পাল, যুগ্ম সম্পাদক রহমত আলী হেলালী, কোষাধ্যক্ষ এনামুল হক মুন্না, আল হাসিব তাপাদার, মোর্শেদ আহমদ লস্কর, জকিগঞ্জ আই টিভি ও জকিগঞ্জ টিভির প্রতিনিধি দল, বিভিন্ন পোর্টালের সংবাদকর্মীবৃন্দ, কাজলসার ইউনিয়নের সদস্য কফিল উদ্দিন, নারী সদস্য রোশনা বেগম, সাবেক সদস্য আব্দুস সালামসহ গন্যমান্য শতাধিক ব্যক্তিবর্গ।
সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ থানার ওসি আবুল কাসেম খাঁনের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, এবাদুর রহমানের জবানবন্দি ও তার ছেলের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন করতে গভীর তদন্ত করবে। যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তে যদি ঘটনা সাজানো বলে প্রমাণিত হয় তাহলে এর পেছনে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply